খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  একদিনে ডেঙ্গুতে আরও ৮ মৃত্যু, শনাক্ত ১১০৮
  ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ট্রাকচাপায় শিশুসহ নিহত ৩
  বুধবার থেকে ডিমের নতুন দাম কার্যকর হবে : ভোক্তা ডিজি
  দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হবে সরকার : শ্রম উপদেষ্টা
  এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ; পাশের হার ৭৭.৭৮
কিস্তির টাকা পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ঋণগ্রহিতারা

ভবদহের জলাবদ্ধাঞ্চলে কিস্তি টাকা আদায়ে এনজিও’র চাপ

অভয়নগর প্রতিনিধি

যশোরের ভবদহ জলাবদ্ধাঞ্চলের মানুষেরা এনজি’র (বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা) ঋণের বিপরীতে কিস্তিতে সুদ আসল পরিশোধ করতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কিস্তির টাকা পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ঋণগ্রহিতারা। কিন্তু প্রতিনিয়ত চাপ প্রযোগ করছে এনজি কর্মীরা।

অভয়নগর উপজেলার ডাঙ্গা মশিয়াহাটি গ্রামের মৃত নগেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে অচিন্ত মন্ডল জানান, তিনি একজন প্রান্তিক মৎস্যচাষী। বিলে তার তিন বিঘার একটি ঘের আছে। মাছ চাষ করার জন্য তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। যার সাপ্তাহিক কিস্তি আসে ২ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়া তিনি জাগরনীচক্র ফাউন্ডেশন থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন সেখানে মাসিক কিস্তি দিতে হয় ৬হাজার টাকা। এ বছর তার মাছের ঘেরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনি আশা করেছিলেন এবছর তার মাছ বিক্রি হবে ৩ লাখ টাকা। কিন্তু ভবদহের ভয়াবহ জলাবন্ধতায় তার ঘের ডুবে সব মাছ বের হয়ে গেছে। ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ করে দৈনন্দিন বাজার ঘাট চলতো। তা ডুবে যাওয়ায় সব শেষ হয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে হাটু জল। তিনি ঘরে মাচা করে বসবাস করছেন। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন। এর মাঝে এনজিওরা কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। কিস্তির দিন তিনি গা ঢাকা দেন।

সড়াডাঙ্গা গ্রামের অনুপম রায় জানান, সুন্দলী বাজারে তার একটি স্টেশনারি দোকান আছে। ভবদহ জলাবদদ্ধতায় তার দোকানে পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। দুই মাস দোকান বন্ধ। তিনি দোকানে মাল কেনার জন্য জাগরণীচক্র ফাউন্ডেশন থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। চার জনের পরিবার নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন। এখন ঋণের কিস্তি দেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিন আগে জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশনের চাপে কিস্তির বাবদ ১০ হাজার ৫শ টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে মাঠ কর্মী বাড়ি থেকে উঠেনি। এ মাসের কিস্তির টাকা দেয়ার সময় হয়েছে বার বার ফোন দিচ্ছে। তিনি কিস্তির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ধোপাদী গ্রামের আব্দুর রশিদ মোল্যা জানান, ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। সপ্তাহে ৪ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। ছেলের বিদেশ যাওয়া হয়নি দালালে টাকা আত্মসাত করেছে। তিনি একজন ক্ষেত মজুর এলাকা ডুবে যাওয়ায় কোন কাজ নেই। এ অবস্থায় এনজিও টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। ভয়ে কিস্তির দিন তিনি ও তার স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভবদহ এলাকায় ১৫ থেকে ২০টি এনজিও বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রগতি সমাজ কল্যাণ সংস্থা, গ্রামীন ব্যাংক, ব্রাক, বন্ধু কল্যাণ ফাউন্ডেশন, আর আর এফ, দারিদ্র বিমোচন, পদক্ষেপ, নবলোক সংস্থা, ব্যুরো বাংলাদেশ, বিভা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন, সোনার বাংলা সহ আরো অনেক।

ভবদহ দুর্গত এলাকায় ঋণের টাকা আদায়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে এনজিও প্রগতি সমাজ কল্যাণ সংস্থার এরিয়া ম্যানেজার নারায়ন চন্দ্র সাহা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি ধমকের সাথে বলেন, ‘আমরা প্রশাসন থেকে ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধের কোন চিঠি পাইনি যে কারনে কিস্তি আদায় করছি। এ ব্যাপারে আপনি কেন নিউজ করবেন। তথ্য লাগলে অফিসে আসবেন।

আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের মাঠ কর্মী বিথীকা মন্ডল বলেন, ‘কিস্তি আদায়ের জন্য উপর থেকে চাপ আছে। তাই সমস্যা জেনেও ভবদহ এলাকায় কিস্তির জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।’

ব্রাক এনজিও’র সংশ্লিষ্ট মাঠ কর্মী শাহিন আহমেদ বলেন, ‘আমার এরিয়ার ভিতর অনেকে কিস্তির টাকা দিচ্ছে। তাই এলাকায় যাই। প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা না করা পর্যন্ত কিস্তির টাকা আদায় করা হবে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘আমি ডিসি সাহেবকে কিস্তি বন্ধ করার জন্য আহবান করেছি। ডিসি সাহেব এখনো ব্যবস্থা নেয়নি। উপদেষ্টা সমন্বিত এনজিও সংগঠনের কাছে সরাসরি গ্রহকদের আবেদনের কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, এনজিও কিস্তি আদায় বন্ধ না করালে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন,‘কোন এনজিও কর্মী নির্দয় ভাবে কিস্তির টাকা আদায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমাকে সেই এনজিওর নাম ঠিকানা সহ তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন।

প্রসঙ্গত,পলি জমে নদী ভরাট হওয়ায় এবছর দুই দফা ভারি বর্ষণে ভবদহ অঞ্চলে দুই মাস যাবৎ প্রায় তিন’শটি গ্রাম ডুবে গেছে। এতে ১০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার লোক। তাদের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। এ অবস্থায় এনজিও’র ঋণ আদায় করায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!